আমিনুল ইসলাম মামুন
দিন গড়িয়ে সপ্তাহ পেরুলো। সপ্তাহ পেরিয়ে পক্ষ, অতঃপর মাস। এ এক মাসের মধ্যে জীবন একবার গিয়েছে আলোদের বাসায়; আজসহ দু’ বার। বাস থেকে নেমে বাসা পর্যন্ত একটা রিক্সা নিল। বাস স্ট্যান্ড থেকে দূরত্ব তেমন নয়, অল্প কয় টাকার ভাড়া মাত্র।
জীবনের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ প্রবল। অপরিণত বৃক্ষে ফল ফলে না। বড় জোর দু’ একটি শাখায় ফলানো যায় কলমের মাধ্যমে। তা-ও তো আর নিজস্ব নয়; ধার করা। সামান্য ঝড়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে কলমের স্থান দিয়ে সেই শাখা। কিন্তু নারীর ভালোবাসার প্লাবন বয়ে যাওয়া মুখাবয়ব আর হৃদয়কে নাড়া দেয়ার মতো চোখের চাহনির কাছে হার মানতেই হবে যে কোন পুরুষকে এ কথা কোন পুরুষ মুখে স্বীকার না করলেও অন্তরে অন্তরে অস্বীকার করার কোন জো নেই। আর সে কারণেই কলমের কাজে নেমে পড়তে হবে।
রিক্সায় বসে আছে জীবন। গতকাল পর্যন্ত তার মনের গহীন কোনে বিন্দুমাত্র স্থান করে নিতে পারেনি এমন ভাবনা। অথচ ফুফুর বাসা থেকে ফেরার পথেই সে ভাবছে, উপায় একটা বের করতেই হবে- হোক চাই বৃক্ষের অপরিপূর্ণ বয়সে ফল প্রদানের জন্য, চাই ভাঙ্গুক তার ডাল। শেষ না হোক পড়ালেখা, বলুকগে লোকে অপরিপক্ক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। চাকরি একটা আমাকে করতেই হবে এবার তা যা-ই হোক। ভাবনায় ছেদ ঘটলো তার পেছন থেকে ‘জীবন’ নাম ধরে ডাক শোনার পর। জীবন রিক্সা চালকের পিঠে হাত দিয়ে বলল রিক্সা থামাতে। রিক্সা থামাতেই পেছন থেকে আমি এসে পড়ল। জীবনের দিকে তাকিয়েই আমি বুঝলো কিছু একটা ঘটেছে। সে আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই বলল, ঠিক আছে, এখন যা। কাল তোর বাসায় আসবো। তখন কথা হবে।
জীবন যেন একটু বিরক্ত হলো। বলল, কথা না থাকলে ডাকলি কেন?
আমি’র কাছ থেকে কোন জবাব এলো না। গলার স্বরটা স্বভাবিক করে নিয়ে জীবন বলল, কাল না, আজ সন্ধ্যায় আসবি। – এই বলে সে আমি’র কাছ থেকে কোন সম্মতি প্রত্যাশা না করেই রিক্সা চালককে রিক্সা টানতে চোখে ইশারা করল।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর আমি জীবনের বাসায় এলো। জীবনের হাতে ‘ওয়ারস এন্ড: এন আইউইটনেস অ্যাকাউন্ট অব অ্যামেরিক্যান লাষ্ট অ্যাটমিক মিশন’ নামক বইটি; যেটির প্রধান লেখক জাপানের নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা হামলাকারী মার্কিন মেজর জেনারেল চার্লস ডব্লিউ সুইনি। জীবন বইটি বিছানার ওপর খুলে রেখে দরজা খুলতে এলো। আমি রুমে ঢুকেই প্রথমে বইটি হাতে নিল। বইয়ের নামটি দেখেই সে বলল, এই অ্যাটমিক মিশন পড়া রাখ্। তোর ভেতর কে ‘অ্যাটমিক মিশন’ চালালো তাই বল।
অপূর্বার সাথে দেখা হওয়ার পর আজই মাত্র আমি’র সাথে দেখা হলো জীবনের। জীবন ধীরে ধীরে আমিকে অপূর্বার সাথে দেখা হওয়ার দিনটির পুরো ঘটনা খুলে বলল। শ্রোতা হিসেবে আমি’র অবস্থানটা শূন্যের কোটায়। কিন্তু আজ তাকে মনে হচ্ছে পাকা শ্রোতা। জীবনের কথার দাড়ি-কমা পর্যন্ত যেন সে লক্ষ্য করছে।
আমি একটু নড়ে-চড়ে বসল। তারপর বলল, পরের ঘটনা শুনি।
জীবন বলল, দিন পনেরো পূর্বে আমি ফুফুর বাসায় গেলাম। আলোকে জিজ্ঞেস করলাম অপূর্বার কথা। জবাব এলো চাপা চাপা। কিছুই স্পষ্ট মনে হলো না। আমার উদ্দেশ্য যেন ওপাড়ে আর এ পাড়ে আমি নিজে। মাঝখানে কুয়াশা।
আলোর হৃদয় সেদিন যেন প্রচন্ড আহত হয়েছিল। তার অনেক দিনের স্বপ্ন যেন ঠুনকো কাঁচের ন্যায় ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে যেতে বসেছে। প্রচন্ড রাগ জন্ম হলো তার বান্ধবীর প্রতি। কিন্তু জীবনের সামনে সে নিজেকে সামলে নিলেও পরে সে অশ্র“ বিসর্জন দিয়েছে অনেক। অথচ বান্ধবীর কাছে আলো কখনোই বলেনি যে জীবন নামের কাউকে সে তার বুকের ভেতরে আসন দিয়ে বসে আছে। জানে না সেও যাকে কি না সে দিয়ে আছে তার মনটা।
জীবন কিছুটা হাফিয়ে উঠলো। একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, আজ আবার গেলাম কুয়াশা সরাতে।
আমি বলল, কুয়াশা কি দূর হলো? না হলে সূর্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হও। কুয়াশা আপনা হতে উবে যাবে।
জীবন যেন আমি’র কথা কিছুই বুঝেনি। তাই আমির কথায় মন্তব্যেরও প্রয়োজন হয়নি তার। সে বলল, আলোর সাথে অপূর্বার কথা হয়েছে। মেয়ে হিসেবে অপূর্বা নাকি বেশ বাস্তববাদী।
আমি বলল, বেশ, বেশ বলেছে সে। এরপর আর জীবন কিছুই বলতে পারেনি। আমিও বুঝে নিল অল্প কথা থেকেই। জীবন বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে উঠলো। তার চোখ ভরে এলো পানিতে। আমি’র হাতটা ধরে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে চাপা স্বরে বলল, আমি ভেবেছি চাকুরী খুজতে শুরু করবো। এছাড়া আর উপায় কি বল?
: কিন্তু পড়াশোনা?
: সেটি এখন আমার কাছে গৌণ হয়ে উঠেছে। মূখ্য হয়ে উঠেছে একটা কাজের সংস্থান।
আমি অশান্ত হয়ে উঠল। শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল, এ হতেই পারে না জীবন। কাজের সংস্থান তোকে করতে হবে, তবে পড়া-লেখার ওপর কোন বিরূপ প্রভাব ফেলে নয়। আমি তোকে টিউশনির ব্যবস্থা করে দিবো।
জীবনের ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসির রেখা ফুটলো। বলল, আমি বড্ড বোকা, তাই নারে আমি?
: কেন শুনি?
: এই ছোট্ট চিন্তাটাও আমার মাথায় আসেনি, তাই।
: মানুষ যখন প্রচন্ড আবেগের মধ্যে ডুবে থাকে, তখন তার স্বভাবিক চিন্তা শক্তি লোপ পায়। আর সে জন্যই তো বন্ধু-বান্ধব আর পরিচিত জন। আমি কালকের মধ্যেই তোকে একটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তুই কোন চিন্তা করিস না। যা কিছু করিস, অন্তত লেখা-পড়ার ক্ষতি করে নয়। কারণ তোর সামনে যাদুর এক হীরক খন্ড ঝলমল করছে যা তুই ছুঁতে পারবি।
জীবন শব্দ করে হাসলো। আমি তার হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
জীবনের সাথে অপূর্বার সাক্ষাৎ হচ্ছে না। কিন্তু দু’ জনই দূর থেকে একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করে। আলোর কাছ থেকে একে অন্যের খোঁজ-খবর নেয়। মাঝে মাঝে বিনিময় হয় উপহার সামগ্রীও। আলো উভয়ের কথা না রেখে পারে না। তবে ওপরে বোঝা যায় না তার ভেতরের ঈর্ষার ধরণ। এ জন্য সে মনে মনে নিজেকেই দায়ী করে। ভাবে, সেদিন ওদের দু’ জনের সাক্ষাৎ না হলেই ভালো হতো।
জীবনের হাতে এখন বেশ কয়েকটি টিউশনি; আমি’র দেয়া একটি টিউশনি দিয়ে শুরু হয়েছিল যা। টিউশনি, ভার্সিটি, বাসায় পড়া-লেখা আর একটা সোনালী ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জীবন, যে ভবিষ্যতে তার সঙ্গী হবে অপূর্বা।
দিন কয়েক গড়িয়েছে।
আজ শুক্রবার। পশ্চিমাকাশে হেলে পড়া সূর্যের আলো ধীরে ধীরে মিষ্টি হয়ে উঠেছে। দালানের গায়ে চুম্বন আঁটা সেই মিষ্টি আলোর স্বাদ গ্রহণ করা যাচ্ছে হর্ষ হৃদয়ে। আবহাওয়াটা বেশ চমৎকার। জীবন আমি’র ভাড়া করা দোকানটায় এলো। আমিসহ বন্ধুদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত। সকলেই একজন লোকের কথার দিকে কান পেতে আছে। লোকটিকে জীবনের পরিচিত বলে মনে হচ্ছিল না। জীবন আসার পর পরই থেমে গেল লোকটির কথা বলা। লোকটি আমিকে উদ্দেশ্য করে বলল, ইনিই কি জীবন ভাই?
: হ্যাঁ, এ-ই জীবন যার কথা কিছুক্ষণ আগে বলেছিলাম।
জীবন বলল, কি কথা হচ্ছিলো রে আমি?
: চুরি বিদ্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কিভাবে পকেটমাররা প্রশিক্ষণ নেয় আর যাত্রীদের কাছ থেকে হাইজ্যাক করে শোন।
এরপর আমি তপুকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি চালিয়ে যাও।
তপু ধীর গতিতে গলার স্বর ওঠা-নামার মাধ্যমে হাত দু’টি নেড়ে এমন ভঙ্গিতে বলা শুরু করল যেন সে একজন শিক্ষক হয়ে ক্লাশ নিচ্ছে আর অন্যরা হচ্ছে তার ছাত্র।
: আমি মাত্র চার আনা ট্রেনিং নিয়েই কাজে নেমে পড়েছিলাম। সাধারণত: ষোল আনা ট্রেনিংই দেয়া হয়। ট্রেনিং নেয়ার ব্যাপারটা ট্রেনিং গ্রহীতার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যেমন আমি লাউ কাটা ট্রেনিংটা নেইনি। এটা আমার ইচ্ছা। কিন্তু এই ট্রেনিংটা ভালোভাবে নেয়া গেলে কেউ সহজে ধরা পড়ে না।
আমি বলল, লাউ কাটা ট্রেনিংটা কেমন শুনি।
তপু আমি’র কথা শেষ হতেই বলতে শুরু করল-
প্রথমে কচি লাউকে বেঁধে ঝুলানো হয়। এরপর সে লাউয়ের ওপর পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ট্রেনিং গ্রহীতাদের প্রত্যেকের হাতে থাকে একটি করে ধারালো ব্লেড। প্রথমে একজন আসে। তাকে বলা হয় লাউয়ের ওপর জড়ানো ঐ পাতলা কাপড়টা এমন ভাবে কাটার জন্য যাতে লাউয়ের গায়ে ব্লেডের আঁচড় না লাগে। যদি কাপড় কেটে ব্লেড লাউয়ের গায়ে লেগে যায় তাহলে কচি লাউ থেকে কষ বেরুতে শুরু করবে এবং পুনরায় প্রস্তুতি নিতে হবে। এভাবে এক এক করে সকলের ডাক পড়ে। কাটার সময় লাউটি কিঞ্চিত নড়তে পারে; বেশি নড়লে সেজন্যও পুনরায় প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। টানা সাতদিন যে এ কাজে সফলতা দেখাতে পারবে তাকেই অপারেশনের অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে ‘বন্ধু প্রশিক্ষণ’, ‘যাত্রী বেচা-কেনা’ প্রশিক্ষণ প্রভৃতি।
একটু ভেবে তপু পুনরায় বলতে লাগল। ‘বন্ধু প্রশিক্ষণ’ হল, কিভাবে যাত্রীদের সাথে বন্ধুত্ব করে ছিনতাই করা যায়। আর ‘যাত্রী বেচা-কেনা প্রশিক্ষণ’ একটু ভিন্ন ধাঁচের। এটি চালু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। এ পদ্ধতিতে দূরপাল্লার যানবাহনের মধ্যে যাত্রীবেশে উঠে চলন্ত গাড়িতে নিজ সীমানার মধ্যে অপারেশন চালানো না গেলে অন্য সীমানার ছিনতাইকারীদের হাতে টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের বিক্রি করে দেয়া হয়। এটা করা হয় সাধারণত পেট্রোল পাম্প বা রেস্তোঁরায় যখন বাস থামে, তখন। সে সময় ক্রেতারা বাসের স্টাফ হিসেবে উঠে। বাসের অন্য যাত্রীরা মনে করে, যে সব যাত্রী উঠেনি তাদের গন্তব্য হয়তো এখানেই। কোন যাত্রীর কাছ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তা-ই বুঝিয়ে দেয়া হয়। ক্রেতারা নির্দ্দিষ্ট সীমানার মধ্যেই সুযোগ মতো ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে কিংবা গাড়ির গতি ধীর করতে বলে। এ সময় তাদের রাস্তায় অপেক্ষমান সদস্যরা গাড়িতে উঠে অপারেশন শেষ করে আবার সকলে নেমে যায়। এজন্য বাসের চালক আর হেলপারদেরকে পার্সেন্টেজ দিতে হয়। তপু ক্ষণিক থামলো। এরপর হেসে বলল, ছিনতাইকারীদের একটা সংগঠনও রয়েছে। বৎসরে একবার করে নির্বাচনও হয়। লড়াইও হয়, বড়ই কঠিন লড়াই। আমি যে গ্র“পের সাথে ছিলাম, সেই গ্র“পের লিডার আবার ঐ কমিটির সহ-সভাপতি। শুনেছি তিনি এবার সভাপতি পদের জন্য প্রার্থী হবেন। …
তপুর কথা শেষ হতে না হতেই রাস্তার মোড় থেকে কতগুলো লোকের চিৎকার শোনা গেল- ধর, ধর শালারে, মার শালারে ইত্যাদি। সবাই দৌড়ে গেল সেদিকে। লোকজন একটি লোককে যে যার মতো করে মারছে; কিল, ঘুষি, লাথি ইত্যাদি। তদুপরি মুখের কথায় তো বেড়া দেয়া নেই কারো। জীবন, আমি, তপুসহ ওরা সবাই একটু দূরে দাড়িয়ে। একজন লোক রিক্সায় করে যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। জড়ো হওয়া লোকগুলোর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সে রিক্সাচালককে বলল, রিক্সা থামাতে। রিক্সায় বসে সে এক পায়ের ওপর থেকে আরেক পা নামাতে নামাতে আমিকে জিজ্ঞেস করল, এখানে কি হইছে ভাই?
: রিক্সা থামিয়ে ছিনতাই করে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছে। তা-ও মাত্র একজন। চারজন ছিল।
লোকটি পুরো হাতার শার্ট পরা ছিল। হাতে ছিল চলনালাপনী। সে রিক্সা থেকে নেমে শার্টের হাতা গুটিয়ে নিল। এরপর চলনালাপনীটা রিক্সাঅলার হাতে দিয়ে বলল, একটু ধরো। আমিও একটু অংশগ্রহণ করি সবার সাথে। দু’পা সামনে এগিয়েই আবার পেছনে তাকিয়ে রিক্সাঅলাকে সতর্ক করে দিয়ে বলল, দেখিস আবার তুই চান্স নিস না। জীবনকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভাই একটু লক্ষ্য রাইখেন। এরপর লোকটি ছিনতাইকারীকে উত্তম-মধ্যম দিতে গিয়ে তা না দিয়েই ফিরে এসে রিক্সায় বসে চলনালাপনীটা হাতে নিয়ে আবার জীবনকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভাইজান, আপনারা কি সবার সাথে অংশ নিয়েছেন?
জীবন মাথা নেড়ে না-সূচক ইঙ্গিত করল। লোকটি বলল, ভালই করেছেন। আমি গিয়েও পারলাম না। লোকটার জন্য মায়া লাগলো। ওর শইল্লের ওপর দিয়া খুব গেছে। মনে হয় বাঁচবে না। আপনারা ভাই সইরা পড়েন। পুলিশ আসলে বিপদে পড়তে পারেন। – এই বলে সে চালককে রিক্সা টানতে বলল। চালক রিক্সা টানতে শুরু করলে লোকটি আবার আরাম করে পায়ের ওপর পা তুলে বসল। জীবন লোকটির কান্ড দেখে হেসে বলল, বড় আজব প্রকৃতির লোক।
জীবন ও তার বন্ধুরা সেখানে আর বিলম্ব করার চেষ্টা করেনি। সবাই যার যার বাসার উদ্দেশ্যে স্থান ত্যাগ করলো। প্রায় ঘন্টাখানেক পর জানা গেল লোকটি মারা গেছে। পুলিশ এসে কয়েক জনকে জিজ্ঞেসাবাদের পর তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রেখে লাশটি থানায় নিয়ে গেল।
যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে ছাত্র পরিবারগুলোর সাথে জীবনের সম্পর্ক। এক ছাত্রের বাসায়তো তার চলাচল রান্নাঘর পর্যন্তই ছিল। এ অনুমতি তার ছাত্রের মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। গৃহকর্তৃকে সে সম্বোধন করে খালাম্মা বলে। তার এ ছাত্রের বোনটির সাথে জীবনের সম্বোধনটি ‘আপনি’ পর্যন্তই পড়ে রইলো যদিও জীবন তার চেয়ে পাঁচ-ছয় বছরের বড়। উভয়ের কেউই যেন এ সম্বোধনে কিছুটাও শিথিলতা আনার পক্ষপাতি নয়। হয়তো গৃহকর্তৃ জীবনকে দেখে পূর্বেই এমন ধারণা করেছেন যার ফলে তিনি তাকে অনেকটা নিজের ছেলের মতো ভাবতে শুরু করেছেন। মাঝে মাঝে এ পরিবারের সকলের সাথে চলে জীবনের একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া, উচ্চ হাসির আলোচনা প্রভৃতি। মাঝে মাঝে ছাত্রের মায়ের অনুরোধে ছাত্র আর তার বোনকে নিয়ে বাহিরেও ঘুরে আসে জীবন।
একদিন জীবন টিউশনিতে এসে অনেকটা নির্বাক হয়ে গেল। তিন দিন তার শরীর খারাপ থাকার কারণে পড়াতে আসা সম্ভব হয়নি। ঘরের বাইরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হৈ-হুল্লোড় করছে এই সন্ধ্যার পরও। বিয়ের আমেজ বিরাজ করছে ঘরের ভেতরে-বাহিরে। আশিক এসে খবর দিল আজ নিলুর বিয়ে। কিছুক্ষণ পর জীবন তার ছাত্র আশিককে জিজ্ঞেস করল, ‘‘খালাম্মা কোথায়?’’
: ভেতরে আছে। ডাকবো স্যার?
জীবন মাথা নেড়ে জবাব দিল। এরপর সোফায় বসল। কিছুক্ষণ পর আশিকের মা এলে জীবন দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কোন প্রসঙ্গ না টেনে সোজা অভিযোগ তুলে বলল, খালাম্মা এটাতো অন্যায়। বোনের বিয়ে হচ্ছে আর ভাই জানে না?
জীবনের প্রশ্নে আশিকের মা কিছুটা লজ্জাবোধ করলেন। এরপর মুখে হাসি নিয়ে বললেন, ভাই ছাড়া বোনকে তুলে দেয়া যায় না বলেইতো বিধাতা তোমাকে যথাসময়ে এখানে এনে হাজির করেছেন। তিন দিন ধরে ছিলে কোথায়?
: শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না। জ্বর জ্বর করছিল।
: আজ কেমন বোধ করছো?
: ভালো, বেশ ভালো।
: তোমাকে খবর দিতে পারিনি বলে কিছু মনে করো না বাবা। তুমিতো ভালো করেই জান আমার বাসায় কোন বয়স্ক পুরুষ লোক নেই। তোমার খালুজানতো বিদেশের মাটিতে।
: কিন্তু খালাম্মা, এতো অল্প সময়ে …
আশিকের মা জীবনকে আর বলতে না দিয়ে বললেন, আজ বিকেলে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল নিলুকে। দেখেই তারা বলল, আজই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে। উঠিয়ে নেয়ার কাজটা পরে হবে। ছেলে নিলুর চাচীর আত্মীয়। যতটুকু জানা গেল, ছেলে মন্দ না। তাই নিলুর চাচা তোমার খালুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেন।
ভদ্র মহিলা কিছুক্ষণ অন্য মনস্ক ছিলেন। হঠাৎ বললেন, সে কি! আমি তোমাকে নিয়ে এখানে কথা বলছি কেন! ভেতরে এসো।
জীবন বলল, ভেতরে লোকজন যে।
: ওতে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। সবাই আমাদের নিজস্ব মানুষ- এই বলে তিনি ভেতরের দিকে পা বাড়ালেন। জীবনও তার পেছনে পেছনে অগ্রসর হতে লাগল। নিলুর কাছে যেতেই নববধুর সাজে সে এসে জীবনকে সালাম করল। ওর চোখে হাসি নেই। জল টলমল করছে। জীবন কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এলো। এতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকা এতোসব নারীর মাঝ থেকে ফিরে এসে এখন সে কিছুটা হালকা বোধ করছে।
বর পক্ষের এক আত্মীয়ের বাসা ছিল পাশেই। কিছুক্ষণ পর বরযাত্রী এলো এবং রাত সাড়ে দশটার মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।
বিয়ের পর পেরুলো দিন পনেরো-এর মতো। জীবন যথা নিয়মেই আসছে ছাত্রের বাসায়। পড়া শেষে যথা নিয়মে আজও তাকে বসতে হলো। কিছু না খেয়ে খালি মুখে যাওয়াতে যেন অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। ট্রেতে করে নাস্তা এলো। অন্যান্য দিন নিলু নিজেই নিয়ে আসতো। আজ সে বাসায় নেই, বেড়াতে গিয়েছে তার আত্মীয়ের বাসায়। নাস্তা নিয়ে এলো অপরিচিত একটি মেয়ে। মেয়েটি বিয়ের দিন নিলুর পাশেই ছিল। জীবনের হালকা স্মরণ আসছে সেদিন নিলুর পাশে যারা ছিল তাদের মাঝে এ মেয়েটিও ছিল। তৎক্ষণাৎ আশিক ভেতর থেকে দ্রুত পায়ে এসে বলল, স্যার ইনি আমার কাজিন। সেদিন বিয়েতে আপনাকে দেখেছিল। আমাদের বাসাতে বেড়াবে আরো কয়েক দিন। স্যার, আমি আসি- এই বলে সে আবার দ্রুত পায়ে ভেতরের দিকে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই বাথরুমের দরজা লাগানোর শব্দ শোনা গেল। জীবন বুঝলো বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়েছে বলে ফিরে এসে পরিচয়টা করিয়ে দিয়ে গেল সে।
মেয়েটি জীবনকে সালাম দিল এতোক্ষণ পর। যেন সে বিগত মুহূর্তগুলো বাকশুন্য ছিল। জীবন মাথা নেড়ে সালামের জবাব দিয়ে বলল, বসুন।
টি টেবিলের দু’ পাশে ওরা দু’ জন মুখোমুখি বসলো। মাঝখানে টেবিলের ওপর কি নাস্তা রাখা আছে সেদিকে লক্ষ্য করেনি জীবন। মেয়েটি মাথা নত করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। গায়ের রঙটা উজ্জ্বল নয়, কিন্তু কালোর খাতায়ও তোলা যায় না তাকে। প্রথম দর্শনের মুহূর্তে জীবন লক্ষ্য করেছিল একটি দাঁতের ওপর আরেকটি দাঁত। তবে একেবারে সামনে নয়, সামনে থেকে দু’টি দাঁতের বামে। স্বাস্থ্য ভালো। অঙ্গে যৌবনের উত্তাল ঢেউ। গায়ের রঙটা অনুজ্জ্বল হলেও মন্দ লাগার মতো নয়। তবে চোখ দু’টি খুবই আকর্ষণীয়। জীবনে অনেক নারীর দেখা পেয়েছে জীবন; দেখেছে তাদের জলভরা, জলহীনা নয়ন। কিন্তু মেয়েদের চোখ যে এতো আকর্ষণীয় হতে পারে তা সে এর পূর্বে আর কখনো দেখেনি এবং কল্পনাও করেনি। মুহূর্তেই তার চোখের সামনে কতগুলো পরিচিত নারীর মুখ ভেসে উঠল, ভেসে উঠল তাদের দু’টি আঁখি। কোনটি সাধারণ, কোনটি রুক্ষ, কোনটি মায়াবী, কোনটি জল ছলছল, কোনটি হাসির ঝিলিক ছড়ানো, কোনটি বেদনার আবার কোনটি রহস্যাবৃত। কিন্তু এ সকলের চাইতে ভিন্ন। জীবন এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনার নাম কি?
: অপরূপা। মেয়েটি স্বাভাবিকভাবে জবাব দিল।
: বাহ্, চমৎকার নামতো! নামের সাথে রয়েছে বাহ্যিক মিলও। মেয়েটি এমনভাবে কিঞ্চিৎ হাসলো যেন জীবন তাকে বিদ্রুপ করেছে।
: জীবন বলল, এমন করে হাসলেন কেন?
: সত্যকে চাপা দিয়েছেন, তাই।
: কেমন করে?
অপরূপা এবার সোজা করল মাথাটা। বলল, আমি কালো। নামটা অবশ্য জন্মের পর পরই রাখা হয়েছিল বলে সবাই তাই বলে ডাকে। ডাকে বলে কি আর নামের সাথে বাহ্যিক মিল আছে? মোটেই না। তাছাড়া …
জীবন অপরূপাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তাছাড়া একটা দাঁতের ওপর আরেকটা দাঁত- এই তো?
অপরূপা কিছুটা লজ্জাবোধ করল। সে মাথা নেড়ে সায় দিল। জীবন বলল, যাকে যেমন করে সৃষ্টি করলে সুন্দর দেখাবে, স্রষ্টা তাকে তেমন করেই সৃষ্টি করেন।
: তবে যে আমরা মানুষে মানুষে সুন্দর-অসুন্দর বলে উভয়ের মাঝে প্রভেদের দেয়াল টানি?
: এখানেই আমাদের যত ছল-ছাতুরী স্রষ্টার সাথে। ফর্সা মানুষকে আমরা বলি সুন্দর আর কালো মানুষকে বলি অসুন্দর। আসলে স্রষ্টা যা সৃষ্টি করেন, তা-ই সুন্দর। তিনি আমাদের সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠান নিষ্পাপ হিসেবে। পরবর্তীতে আমরা হয়ে যাই পাপী। কিন্তু কালো মানুষকে আমরা অসুন্দর বলতে দ্বিধা করি না অথচ দ্বিধা করি পাপী মানুষকে অসুন্দর বলতে। নিজেদের ত্র“টি ঢাকবার জন্য স্রষ্টার সাথে এ আমাদের ছল-ছাতুরী নয় কি? আর আপনিতো সত্যিই অপরূপা। আপনার মাঝে এমন কিছু আছে যা অনেকের মাঝে নেই। আমিতো রীতিমতো দেখছি আপনার মাঝে এমন একটি বিষয় রয়েছে যা আমি অতীতে আর কোন নারীর মাঝে দেখিনি।
অপরূপা খুবই পুলকিত হলো। এই পুলকিত হওয়াটা যতটা তার প্রতি জীবনের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শনের কারণে, তারচে বেশি হলো জীবনের বিশ্লেষণী ক্ষমতার জন্য। উতাল চোখ দু’টি তুলে সে জীবনের চোখের দিকে তাকাতেই সে দেখে, জীবন তার পাপড়ি মেলা চোখের পাতা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। জীবন কিছুটা লজ্জা পায়, লজ্জা বোধ করে অপরূপাও। অপরূপা অপরাধীর ন্যায় বলল, দেখেন আমি কেমন অন্যায়টা করে ফেললাম। আপনার সাথে শুধু কথাই বলে চলেছি অথচ খাওয়ায় যে বিঘœ ঘটিয়ে চলেছি সে কথা একবারেই ভুলে গেছি।
জীবন ট্রে-তে রাখা পিঠাগুলোর দিতে তাকাতেই অবাক হলো। ট্রে-তে আরও রয়েছে কলা, মিষ্টি, চা আর একগ্লাস পানি। শুকনো পিঠাগুলোতে লেখা রয়েছে ‘জীবন’।
লেখাটি পিঠা তৈরীর মূল উপাদানের সাথে লালচে রঙের ব্যবহারে করা হয়েছে। জীবন চোখ তুলে তাকালো অপরূপার দিকে। অপরূপা জীবনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ। জীবন তাকাতেই সে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিল। জীবন একটা পিঠা হাতে নিয়ে বলল, বাহ্, বেশ সুন্দর! আপনার সৃষ্টিশীলতার তারিফ না করে পারছি না। কিন্তু কি প্রয়োজন ছিল এতো শ্রম এ কাজে অপচয় করার?
অপরূপা এর কোন জবাব দিল না। শুধু মনে মনে ভাবলো, এ অপচয় নয়। এর মাঝে রয়েছে আমার নিয়ন্ত্রিত আবেগ আর অনেক স্বপ্ন। ‘ও হ্যাঁ, আপনি এখনো নিচ্ছেন না যে?’- ভাবনার জাল ছিঁড়ে বলল অপরূপা।
বেশ সময় গড়ানোর পর জীবন ঘড়ির দিকে তাকালো। একটু বিলম্ব হয়ে গেছে তার। খাওয়া শেষে সে প্রস্থানের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালো। অপরূপাও দাঁড়ালো তার সাথে। কিছু একটা যেন বলতে চায় অপরূপা। বলতে পারছে না। যেন কণ্ঠনালীতে আঁটকে আছে কথাটি। জীবন জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবেন?
অপরূপা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাথা নেড়ে না বোধক জবাব দিল।
দিন যেতে লাগলো এক এক করে। যথা নিয়মে পড়াতে আসে জীবন। দেখা হয়, কথা হয় ওদের দু’ জনের। এরই মধ্যে একদিন কথা-বার্তা শেষে যাওয়ার সময় অপরূপা একগুচ্ছ ফুল এনে জীবনের হাতে দেয়। নিলুর মা বাসায় নেই। বেড়াতে গিয়েছেন গ্রামে। জীবন হাসি মুখে ফুলগুলো গ্রহণ করে ধন্যবাদ জানাতেই অপরূপা একটি ভাঁজ করা সাদা কাগজ জীবনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। জীবন একটু থামে। তার সামনে ভেসে উঠে অপূর্বার মুখ। একটু হেসে সে হাত বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করেই সেটি নেয়। এরপর বেরিয়ে পড়ে জীবন। ফুলগুলো নিয়ে বাসায় এলে জীবনকে তার মায়ের জেরার সম্মুখীন হতে হয়। কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে, কতোদিন থেকে পরিচয়, আর কিছু দিয়েছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবন সবই সত্য বলল শুধু সত্যকে আড়াল করল ‘আর কিছু দিয়েছে কি না’- এ প্রশ্নটির ক্ষেত্রে। শুধু জানার জন্য জীবনকে মায়ের এতোসব জিজ্ঞাসা। সন্দেহ বা অন্য কোন কারণে নয়। মা বেশ করেই জানেন জীবন ভেবে-চিন্তেই কাজ করে। আবেগ আর ক্রোধের নিয়ন্ত্রণে সে লাগাম টেনে ধরতে জানে শক্ত হাতে। সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ খুঁজে নিতে পারে জীবন নিজেই। সুতরাং জীবনের ব্যাপারে চিন্তা মানেই অনর্থক চিন্তা।
রাত অনেক হয়েছে। পড়ার টেবিলে জীবন। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জীবন অপরূপার দেয়া ভাঁজ করা সেই কাগজটি খুলল। তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না তার চোখে মুখে। চিঠিটা খোলার পূর্বে সে যা ধারণা করেছিল তাই নিয়ে লেখা চিঠিটি।
এরপর সময় এলো চিঠির জবাব দেয়ার। এর মাঝে অপরূপা আর জীবনের সম্পর্কের দূরত্ব আরও কমতে থাকে। অপরূপার ইচ্ছায় সে এখন জীবনের কাছ থেকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধিত হচ্ছে। কিন্তু কি দেবে চিঠির জবাব তা ভাবতে গিয়ে অপূর্বা আর অপরূপাকে নিয়ে তার মাঝে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলশ্র“তিতে আর জবাব দেয়া হয়ে উঠে না। চিঠির জবাব না পেয়ে অপরূপা জীবনের সাথে আর দেখা দেয় না। পাঁচ দিন পর নিলু একটা চিঠি এনে দেয় জীবনকে। জীবন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। নিলু বুঝতে পারে। সে বলে, জীবন ভাই, অপরূপা বাড়িতে চলে গেছে। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আপনাদের দু’ জনের ব্যাপার এটা। কি বলতে কি বলে শেষে আপনার আর আমার সম্পর্কের মাঝে দেয়াল তৈরীর সূচনা হলে তা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। ভবিষ্যতেও হওয়ার নয়।
নিলুর কথা শুনে জীবনের চোখ জলে চকচক করে উঠলো। কিছু না বলে জীবন পা বাড়ালো।
জীবনের বাসার অদূরে একটি চায়ের দোকান। এখানে সে প্রয়োজন ছাড়া বসে না। দোকানে এসে বসল সে। পকেট থেকে চিঠিটা বের করে নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলো তাতে। অপরূপা চিঠির এক অংশে লিখেছে, ‘কিন্তু আমার চিঠির উত্তর না পাওয়ার অর্থ যাই হোক, আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো অমৃত্যু।’ চিঠিতে অপরূপার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাও ছিল। চিঠিটা পড়া শেষে জীবন বিষণœ মুখে বেরিয়ে পড়ল দোকান থেকে। দোকানের মালিক শান্ত চাচা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল জীবনের দিকে। তিনি মনে মনে বললেন, ‘জীবনের হলোটা কি? কিছুটা অন্য রকম মনে হলে ওকে!’
(চলবে)
বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন: এক জীবনের গল্প