আমিনুল ইসলাম মামুন
চোখে স্বপ্ন আর কর্মব্যস্ততায় সময় কিভাবে এত দ্রুত বয়ে যেতে পারে তা জীবন এই প্রথম উপলব্ধি করল। তার মনে হয় এই তো মাত্র ক’দিন হল সে অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। আর এখন তার সামনে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা। অপূর্বার সামনেও এখন ফাইনাল পরীক্ষা। এ সময় তাদের দু’জনের কেহই একে অন্যের ব্যাপারে খুব বেশি ভাবা ঠিক নয়; ঠিক নয় তেমন দেখা-সাক্ষাৎও। জীবন ভাবে, এ সময়গুলো দু’ জনের জন্যই মূল্যবান। তাই সে অপূর্বার সাথে সাক্ষাতের পরিমাণ কমিয়ে আনতে লাগলো। এটা যতটা না জীবনের জন্য প্রয়োজন; তার চেয়ে বেশি অপূর্বার জন্য বলে মনে করে সে। তাই সে ফুফুর বাসায় এলেও আলোর মাধ্যমে অপূর্বাকে খোঁজ-খবর দেয়া থেকে বিরত থাকতে লাগল। আলো এতে বেশ করে ভাবতে শুরু করে জীবনকে নিয়ে। সে মনে করে হয়তো কোন কারণে জীবন আর অপূর্বার সম্পর্কে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
আলোর পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। বাবা-মা তার জন্য একজন শিক্ষক খুঁজছেন পরীক্ষা-পূর্ব এ কয়েক মাস আলোর পড়া-শোনাটা একটু তদারকি করার জন্য। এজন্য জীবনকে বলা হলে তার সায় পাওয়া যায়। জীবন তার ফুফু-ফুফাকে এ-ও বলে নিয়েছে যে তারও সামনে পরীক্ষা। সে রুটিন মানতে পারবে না। যখন সময় পাবে, তখনই আসবে। সপ্তাহে চার দিন, তিন দিন, দু’ দিন এমনকি এক দিনও হতে পারে। ফুফা বললেন, সেটা তোমার ইচ্ছা। ফাইনাল পরীক্ষা ওর। সেটা ভেবে তুমি আসবে।
জীবনের ওপর যেন দায়িত্বটা বেড়ে গেল। সে অনুযায়ী জীবন আসছে আলোদের বাসায়। জীবনের টিউশনির টাকা থেকে বাবা-মাকে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাঝে মাঝে এটা-সেটা কিনে নেয় বাসায়। নিজে খরচ করে প্রয়োজন অনুযায়ী। বাদ বাকিটা ফেলে রাখে ব্যাংকে।
আজ সন্ধ্যার পর আলোদের বাসায় এসেছে জীবন। বিকেলে একটা আলোচনা সভায় গিয়েছিল বলেই সন্ধ্যার পর হওয়া। এটি ছিল রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যের ওপর তুলনামূলক আলোচনা। তার ভার্সিটির বন্ধুরা ছিল এটির আয়োজক। প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে বন্ধুরা তার সহযোগিতা চাইলে জীবন বন্ধুদেরকে সহযোগিতা করে। এটি তার এক বন্ধুর নামে লিখা ও পঠিত হয়। প্রবন্ধটি প্রশংসিত হওয়ায় জীবনের কাছে ভালো লাগে। অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুরা তাকে ধন্যবাদ জানায়। জীবন বলে, “এতে ধন্যবাদ জানানোর কিছু নেই। আয়োজনে ব্যস্ত ছিলি বলে তোরা আমার সাহায্য চেয়েছিস। নইলে শামীম নিজেই তো খুব ভালো প্রবন্ধ লিখতে পারে।’’ জীবনের এমন মনোভাবের কারণে বন্ধুরা তাকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। জীবন বরাবরই এমন। তাই মাঝে মাঝে তার বন্ধুরা মন্তব্য করে “বড় মনের মানুষ না হলে কারো কাছ থেকে এমন কিছু আশা করাটা কল্পনাতীত।’’
জীবন সামনের রুমটায় শুয়ে আছে। তার বুকের ওপর একটা বই, তাতে চোখ বুলাচ্ছে সে। দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির ঘন্টার কাঁটাটি দশের ঘর অতিক্রম করেছে পূর্বেই। ভোজন পর্বটা সেরেছে অনেক আগে। জীবন আলোকে বলল, রাত অনেক না হলেও আমি ঘুমাবো আলো। আমার বড্ড ক্লান্তি লাগছে আজ। আলোটা নিভিয়ে দিয়ে তুই নিজের রুমে গিয়ে পড়। আলো শোনলো শুধু, জবাব দেয়নি কোনো।
টেবিলের একপাশ থেকে টেবিল ফ্যানের বাতাস তার মুখের ওপর ঝাপটা দিয়ে তার পর গিয়ে পড়ে জীবনের গায়ে। একটু পরে আলোর কবরীটি খুলে পড়ে। ফ্যানের নরম বাতাসে কেশগুলো তার পিঠের ওপর আষাঢ়ের দূরন্ত আকাশ-আঁচলের ন্যায় উড়তে লাগল। পার্থক্য কিছুটা রয়েছে বৈকি। আষাঢ়ের আকাশ-আঁচল বন্ধনহীন, আর এখানে তা নয়; এই যা। চুলের সাথে যেন উড়ছে আলোর মনটাও। কল্পনার জাল ছড়িয়ে দেয় সে দূর, বহু দূর। ভাবে সে “আমার নৃত্যরত কেশগুলোও কি তার কাছে কোন বার্তা বইয়ে দিচ্ছে না? সে কি বোঝে না আমি বুকের ভেতর একটা স্বপ্ন-পাহাড় বইছি?’’
জীবন বইটি বন্ধ করে আলোর দিকে তাকালো। দেখল ওর দীঘল কালো চুলগুলো উড়ছে বাতাসে। মালিকের চেষ্টায় যে পূর্ণ অবহেলা সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণের, তাতে সন্দেহের অবকাশ না থাকারই কথা জীবনের। কিন্তু সে বলে, আলো, চুলগুলো বেঁধে নাও। পুরুষ মানুষের নজর লাগলে ঝরতে শুরু করবে যে।
আলো পেছনে হাত ঘুরিয়ে দূরন্ত কেশগুলোকে শাসানোর চেষ্টা করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় যে তার অবহেলা রয়েছে, তা আবারো ধরা পড়ে জীবনের চোখে। জীবন বলে, আলো এদিকে তাকাও।
আলো ক্ষণিক বিলম্বে মাথা ঘুরিয়ে চোখ তুলে তাকায় জীবনের দিকে। ওর চোখ দু’টি ভিজে আছে পানিতে। কয়েক ফোঁটা গড়িয়ে পড়েছে, তার চিহ্নও রয়েছে দুই কপোলে। জীবন বুঝলো, ও এতোক্ষণ পড়েনি, পাঠকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল মাত্র। আর বাস্তবটা হলো চোখের পানি, যা সে আড়াল করে রেখেছিল এতোক্ষণ।
জীবন জিজ্ঞেস করে, তোর কি হয়েছে শুনি?
আলোর কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে সে নিজেই বলে, টেবিল ফ্যান এতো নিকটে রেখে বসতে নেই। এতে বাতাসটা বেশ করে চোখে লাগে। আয়নায় গিয়ে দেখ অশ্র“ গড়িয়ে চোখ ফুলে চোখের দশা হয়েছে কি! যা, এক মূহুর্তও নয় আর এখানে। হাত-মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়।
আলো উঠে দাঁড়ায়। যে কথা বলবে ভেবেছিল জীবনকে, সে কথা বলবার মতো সাহস খুঁজে পায়নি সে। নীরবে সে এলো চুলে বেরিয়ে গেল।
একঝাঁক কষ্টের পায়রার দাপাদাপি বুকে নিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো আলো। মুখটা ধুয়ে নেয়া কিংবা মশারি খাটানো কোনটারই বিন্দুমাত্র প্রয়োজন অনুভূত হয়নি তার কাছে। সারারাত মিলাতে পারেনি চোখের দু’টি পাতা। নীরবে অশ্র“ গড়িয়েছে শুধু। আর নোনা জলে তৃষ্ণা মিটিয়েছে তৃষ্ণার্ত শিমুল তুলা।
সকাল সাতটা। সোনালী নরোম রোদ্দুর ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে রুক্ষতায়। জীবন নাস্তা খাওয়া শেষে প্রস্তুত হলো ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আলোর চোখ দু’টো ঘুমে ঢুলু ঢুলু। শব্দহীন পায়ে জীবনের কক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে ধাক্কা খেল সে নিজের কাছেই। জীবনও লজ্জিত হল কিছুটা। একটু পর সে আবার গলা খাকরি দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল। জীবন হাত ঘড়িটা পরতে পরতে বলল, আলোর মাঝে অন্ধকার, এ কেমন ব্যাপার!
: কেমন অন্ধকার?
: অন্ধকার কেমন হয় জান না? আয়নার সামনে গিয়ে দেখ প্রতিবিম্ব কি বলে। মুখটা এতো মলিন কেন?
আলো কিছুক্ষণ নীরব থাকে। তারপর জবাব দেয়, অন্ধকারতো আলোর পাশেই থাকে। জ্বলন্ত প্রদীপের নিচে লক্ষ্য করাটাই তার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
জীবন জুতা পরছিল। ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল, আজ ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরবো। এখানে আসা হবে না।
: বাসায় কি খুব প্রয়োজন?
: খুব নয়, মোটামুটি।
: আজ ক্যাম্পাস থেকে এখানে আসা যায় না? সন্ধ্যার পর না হয় বাসায় ফিরবেন।
: তা যায়। মনে হচ্ছে প্রয়োজনটা অন্য?
আলো নীরবতা অবলম্বন করে। জীবন বলল, ঠিক আছে তাই হবে। আমি এসে লাঞ্চ করবো।
আলো শুধু মাথা নাড়ালো। তারপর কোন কথা না বলেই পা বাড়াল। জীবনও বেরিয়ে পড়ল ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে।
একটা থেকে দু’টা এ সময়টাকেই মূলত লাঞ্চ আওয়ার ধরা হয়। কিন্তু দু’টা পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা যখন আড়াইটার ঘরে গিয়ে পৌঁছলো তখনো এলো না জীবন। আলোও লাঞ্চ করেনি এখনো; জীবনসহ একত্রে করবে এই প্রত্যাশায়। মিনিট দশেক পরেই এসে পড়ল জীবন। একত্রে লাঞ্চ সারলো দু’ জনে।
জীবন লাঞ্চ করার পর ড্রইং রুমে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। উদ্দেশ্য ঘুমানো নয়, বিশ্রাম নেয়া। একটু পরে আলো আসতেই সে উঠে বসল। আলোও বসল সোফায়। বলল, একটু ঘুরতে বেরুতে চেয়েছিলাম।
: কোথায়? আর ঘুরতে বেরুবার এতো প্রয়োজনই বা পড়ল কেন?
আলো একটু রুক্ষ স্বরেই বলল, কেন কলেজ আর বাসা এর বাইরে কোথাও কি যেতে মানা?
জীবন মৃদু হাসল। বলল, তা হবে কেন। কোথায় যাবে বলো?
: প্রকৃতির কাছে; তা যেখানেই হোক।
: তবুও।
: ধানমন্ডি লেকের ধারে সবুজের স্নিগ্ধ ছায়াতলে।
: সেখানে গেলেতো পুরোপুরি প্রকৃতির কাছে যাওয়া হবে না। কৃত্রিমতার ছোঁয়া সেখানে স্পষ্ট।
: কৃত্রিমতার ছোঁয়া ছাড়া প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখা কি সম্ভব?
জীবন এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে বলল, বাহ্ বেশ চমৎকার কথা বলেছিস তো। তাহলে ফুফুর কাছে বলে নে।
: আপনি ভেবেছেন মায়ের কাছে না বলেই আমি আপনাকে বলেছি?
: ঠিক আছে। কখন বেরুতে চাস?
: দশ মিনিটের মধ্যেই।
: তৈরি হয়ে নে। আমিও হচ্ছি।
লেকের ধারে হাঁটছে দু’ জনে। কথা হচ্ছে, হচ্ছে সশব্দে হাসিও। আলোর মুখে হাসি থাকলেও বুকের ভেতরটায় ধড়পড় করছে। বলতে গিয়ে বলা হয়ে ওঠেনি এতক্ষণেও মনের কথাটি। কিন্তু চোখে তার আবেগের প্রকাশ। হাঁটতে হাঁটতে সময় পার করছিল ওরা রৌদ্রজ্জ্বল দিনে গাছের ছায়া, পাখির ডাকাডাকি আর কখনো কখনো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আসা রৌদ্র-চুম্বনের মধ্য দিয়ে। হঠাৎ আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা গেল। কিছুক্ষণ পূর্বের সতেজ সূর্যটাকে গিলে ফেলল একখন্ড মেঘ। বৃষ্টিও পড়তে শুরু করল ছোট ছোট ফোঁটায়। জীবন আর আলো একটি ছাতার নিচে এসে বসল। ইট-পাথরের তৈরী এ ছাতাটি বহনযোগ্য ছাতার তুলনায় অনেক বড় হলেও অধিক উচ্চতা সম্পন্ন বলে বাতাসে বৃষ্টির ছিঁটে ফোঁটা এসে গায়ে লাগে। জীবন আলোর গা ঘেঁষে বসে। আলো আশেপাশে তাকায়। যা দু’ একজন লোক কিছুক্ষণ পূর্বে দেখা গিয়েছিল, তারাও এখন নেই। পুরো জনমানব শূন্য পরিবেশ। আলো জীবনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, সূর্যের আলোটা কত অল্প সময়েই না হজম করে ফেলল একখন্ড মেঘ।
: একটু বাদেই তা কেটে যাবে। সূর্যের ওপরের ওই বৃহৎ মেঘ খন্ডটি ছাড়া আর বড় কোন মেঘের আনাগোনা নেই আকাশে। কিন্তু আলো, তোমার মুখের আলোটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে দেখছি। সকালে কেমন মলিন ছিল মুখটি আর এখন চাঁদের মতো।
: সকালে যে সূর্যের আলো ছিল, আর এখন যে সামান্য অন্ধকার পরিবেশ তাই এমন মনে হচ্ছে হয়তো। সূর্যের আলো ওঠলে আবার পরিবেশের মলিনতা দূর হয়ে তা এই মুখটাকে ছেয়ে নেয় কি না কে জানে।
জীবন চুপ হয়ে রইল। কথা শেষে আলোও চুপ থাকে কিছুক্ষণ। যে কথাটি বলার জন্য জীবনকে এখানে নিয়ে আসা, যা বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ নিস্তেজ হয়ে আসে অজানা ভয় আর লজ্জায়, বুকের ভেতরটা ফেটে হয় চৌচির, এবার সেই কথাটি বলতে চায় আলো। জীবনের দিকে চোখ তুলে বলে, জীবন ভাই…।
না বলে থেমে গেল আলো। জীবনের চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নেয় সে। জীবন বলল, কি বলতে গিয়ে থামলে বলো?
আলো কিছুই বলে না। বুকের ভেতর ধ্বক্ ধ্বক্ শব্দটা কেবলই বেড়ে চলছে। জীবন বলল, কিছুই বলছিস না যে?
আলো তবুও নীরব থাকে। কয়েক মিনিট কেটে যায় এভাবে। সূর্যের ওপর থেকে ততক্ষণে মেঘের খন্ডটি সরে গেছে। রোদ্র এসে পড়ছে সবুজ পাতার ওপর। বিকেলের রোদ বলে তাতে রয়েছে মিষ্টি ছোঁয়া। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাওয়া সবুজ ঘাসগুলোর ওপর সেই আলো পতিত হয়ে একটা দারুণ পরিবেশ সৃষ্টি হল। ভেজা পালক নিয়ে পাখিরা গাছের পাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়া-উড়ি করছে। আলো জীবনের দিকে চোখ তুলে তাকায়। জীবন পায়ের ওপর পা তুলে লেকের স্বচ্ছ জলের দিকে তাকিয়ে আছে।
আলো বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠে। মনস্থির করে সকল ভয় আর লজ্জা উপেক্ষা করে সে প্রকাশ করবে মনের না বলা কথাটি। ডান হাতটি বাড়িয়ে দেয় সে জীবনের বাম বাহুর দিকে। জীবন লেকের ওপর থেকে চোখ দু’টি সরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আলোর দিকে তাকায়। আলো সংযত করে নেয় নিজের হাতকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্পর্শ না করেও লজ্জা তার চোখ দু’টিকে এমন করে ঘিরে ধরেছে যে খুলতেও লজ্জা হচ্ছিল তার।
জীবন বলল, চল বাসায় ফেরা যাক।
আলো কিছুই বলল না, মাথা নেড়েও কোন সায় দেয়নি সে। শুধু উঠে দাঁড়াল আর জীবন যখন পথ চলতে লাগলো, তখন সে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করল।
সন্ধ্যার পূর্বক্ষণেই দু’ জন বাসায় পৌঁছল। জীবন দেরি না করেই আবার বেরিয়ে পড়ল নিজ বাসার উদ্দেশ্যে।
সন্ধ্যা হল ঘন্টাখানেক পূর্বেই। মনটা খুব খারাপ আলোর। তাই বারান্দায় বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছে সে এ সময়টুকু। এইমাত্র পড়ার টেবিলে এসে বসল সে। দেখল, টেবিলের বামপাশে সাজিয়ে রাখা বইগুলোর ওপর চিঠির মত একটি সাদা কাগজ ভাঁজ করা। হাত বাড়িয়ে সেটি নিল সে। আলোর মলিন মুখমন্ডলে নেমে এলো অমানিশা। চিঠিটা পড়তে লাগল সে মনে মনে। চিঠিটা অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় তার প্রচন্ড ক্ষোভ হয় লিখিয়ের ওপর। চিঠিখানা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে সে তা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে বাইরের দিকে। জানালার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে সে তাকিয়ে দেখে এতক্ষণে আকাশে চাঁদ উঠল। অনমনা হয়ে সে চেয়ে থাকে চাঁদের শরীরে। দু’ ফোটা অশ্র“ গড়িয়ে আসতে থাকে তার দু’ গালের দিকে।
(চলবে)
বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন: এক জীবনের গল্প